পারস্পরিক লাভজনক সংলাপের অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রণধীর বলেন, ‘আমরা গঙ্গাসহ একে অপরের সঙ্গে ৫৪টি নদীর পানি ভাগাভাগি করি। আর এসব নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) রয়েছে।’
পানি বণ্টনসহ এ ধরনের ইস্যুতে ভারতের অভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয় বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি কলকাতায় জয়েন্ট রিভার কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। আগামী বছর এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
গত ১৯ জুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্যা সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’ শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আশপাশের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে আমরা সবসময় নজর রাখি। কারণ এগুলো আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা আলাদা আলাদা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই সম্পর্ক বিচার করার সময় আমরা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিয়ে থাকি।’
ওই বৈঠক নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিশ্চিত করেন, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেই এবং এটি ভারতের বিরুদ্ধেও কিছু নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো জোট করছি না। এটি রাজনৈতিক নয়, কেবল দাপ্তরিক পর্যায়ের একটি বৈঠক। এখানে কোনো জোট গঠনের বিষয় নেই।’
বৈঠকটি ভারতের ওপর কৌশলগত চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই না। এটি আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি। টার্গেট করার বিষয় এখানে নেই।’
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রণধীর বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার, সমমর্যাদা এবং পারস্পরিক চাওয়ার ভিত্তিতেই ভারতে সংশোধিত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আগেও বহুবার গঠনমূলক বৈঠকে আলোচনা করেছি, এমনকি সচিব পর্যায়েও।’
ঢাকার খিলক্ষেতে দুর্গা মন্দির ধ্বংস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, কট্টরপন্থিরা সেখানে একটি মন্দির ভাঙার দাবি তুলেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো অবৈধ জমি ব্যবহারের যুক্তিতে সেটি ভাঙার অনুমতি দিয়েছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত হতাশ যে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের সম্পত্তি ও উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারেরই দায়িত্ব।’