বিনা পারিশ্রমিকে ৩ হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে যাওয়া মনু মিয়া আর নেই

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
 ছবি:
ছবি:

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের দয়ালু গোরখোদক মনু মিয়া আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।

মনু মিয়া ছিলেন মানবতার অনন্য এক প্রতীক। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তিনি দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর। শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, তার দক্ষতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানীর বনানী কবরস্থান থেকে শুরু করে হাওরের দুর্গম এলাকা ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে।

মনু মিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম। ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর জানান, “তার প্রিয় ঘোড়াটি মারা যাওয়ার পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তার মৃত্যুতে আমরা একজন নিঃস্বার্থ, দয়ার মানুষকে হারালাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।”

জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দী কবর খুঁড়ে কাটানো এই মানুষটি ছিলেন নিঃসন্তান। দুই ভাই ও তিন বোনের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। নিজের ঘোড়া কেনা ও কবর খোঁড়ার কাজে ব্যয় চালাতে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে পৈত্রিক জমি, এমনকি রাখতে হয়েছে সম্পত্তি বন্ধক।

কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কোদাল-খুন্তি তিনি ঘোড়ায় করে বয়ে নিয়ে যেতেন। প্রয়াতদের শেষ ঠিকানা সাজাতে ছুটে চলতেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে সঙ্গে নিতেন নিজের সরঞ্জাম। তবে চলতি বছরের ১৬ মে সেই বিশ্বস্ত ঘোড়াটিও মারা যায়। এরপর থেকেই ভেঙে পড়েন মনু মিয়া।

একটি বিশেষ গুণ ছিল তার—যাদের কবর তিনি খুঁড়তেন, তাদের মৃত্যুর তারিখসহ যাবতীয় তথ্য তিনি লিখে রাখতেন নিজের ডায়েরিতে। মনু মিয়ার মতো নিঃস্বার্থ, নিরলস ও দানশীল মানুষ আজ বড়ই বিরল। তার অবদান এলাকাবাসীর হৃদয়ে আজীবন অমলিন হয়ে থাকবে।

বিষয়:

সারাবাংলা
এলাকার খবর

সম্পর্কিত